মুক্তিযোদ্ধা-চুক্তিযোদ্ধা সম্বোধনে পরিবারভুক্ত বড় ভাইকেসহ গোটা মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর আঘাত দিয়ে কটুক্তি করেছে এক ছোট ভাই।
আজ রবিবার (১২ নভেম্বর) সকাল ১০ঘটিকায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কনফারেন্স রুমে এই কটুক্তির প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে সহোদর ছোট ভাই অবসরপ্রাপ্ত কাস্টমস কর্মকর্তা এ. এস. এম মহসিনের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উপস্থাপন করেন কিশোরগঞ্জ শহরের শ্রীধরখিলা এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা অভিযুক্তের বড় ভাই এডভোকেট এ. এস. এম ফেরদৌস।
সংবাদ সম্মেলনে বড় ভাই তার হস্তলেখায় উল্লেখ করেন, বাড়ির সীমানা ও গ্যাস লাইন নিয়ে সহোদর ছোট ভাই কানাডা প্রবাসী এ.এস.এম. খায়রুল ও বসতভিটায় বসবাসকারী এ.এস.এম. মকবুলের সাথে তার বিরোধ চলছে।
বিরোধের অবসান ঘটাতে বার বার উদ্যোগ নিলেও তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে সবসময়। বড় ভাই হন্যে হয়ে ছুটে গেছেন পৌরসভায়, ছুটে গেছেন আইনজীবী সমিতিতে, ছুটে গেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে। এতে কোনো সূরাহা হয়নি। এক পর্যায়ে কিশোরগঞ্জ পৌরসভার কর্মকর্তাগণ সীমানা নির্ধারণের উদ্যোগ নিলেও ছোট ভাইদের বাঁধার কারণে তার সমাধান করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি । পরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতৃবৃন্দ ও গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মীমাংসার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। হতাশার শেষলগ্নে এসে আদালতে মামলা করেন বড় ভাই ফেরদৌস। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের দায়িত্ব দেন পিবিআইকে। আশা ছিলো এখানেই সব অভিযোগের অবসান হবে। আর পিবিআই এরই ধারাবাহিকতায় তদন্তকারী কর্মকর্তা দু’পক্ষকেই পিবিআই কার্যালয়ে ডাকেন । তাই আজ রবিবার (১১ নভেম্বর) বেলা ১২টায় মামলার বাদী বীর মুক্তিযোদ্ধা এ. এস. এম ফেরদৌস ও তার পক্ষে বীর মুক্তিযোদ্ধা গোপাল নন্দী এবং বিবাদী এ. এস. এম মহসিন, এ.এস.এম মকবুল ও তাদের আইনজীবী রাকিবুল পিবিআই কার্যালয়ে উপস্থিত হন। এ সময় তদন্তকারী কর্মকর্তা পিন্টু রায় ও পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেনও উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগকারী সেখানে তার অভিযোগ উত্থাপন করার সময় বিবাদী মহসিন মুক্তিযোদ্ধা-চুক্তিযোদ্ধা শব্দচয়নে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ওপর চরম আঘাত হানেন। এটা কটুক্তি,ব্যঙ্গ ও ঠাট্টা-বিদ্রূপ-অবমাননার চরম বিষয়। এ নিয়েই অভিযোগ করেন মামলার বাদী ফেরদৌস। সঙ্গে সঙ্গেই এ কথার প্রতিবাদ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা গোপাল নন্দী।
সংবাদ সম্মেলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা এ. এস. এম ফেরদৌস বলেন, জীবন বাজি রেখে আমরা মুক্তিযু্দ্ধ করেছি। মুক্তিযুদ্ধের এত বছর পর কেউ মুক্তিযু্দ্ধ নিয়ে কটুক্তি করবে, সেটা মেনে নেওয়া যায়না। তিনি এর বিচার দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বাসির উদ্দিন ফারুকী, সাবেক সহকারী কমান্ডার (দপ্তর) হাবিবুর রহমান, সাবেক সহকারী কমান্ডার (সাংগঠনিক) অধ্যাপক আবুল কাশেম, বীর মুক্তিযোদ্ধা গোপাল নন্দী উপস্থিত ছিলেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের কুটুক্তি বিষয়ে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বাসির উদ্দিন ফারুকী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে কটুক্তি করায় আমরা গভীরভাবে মর্মাহত। তিনি এর তীব্র নিন্দা, ঘৃণা ও প্রতিবাদ জানান।
তবে অভিযুক্ত এ. এস. এম মহসিন কটুক্তির অভিযোগ অস্বীকার করেন।
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, আমার উপস্থিতিতে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটুক্তি করেনি কেউ। এমন কথা বাইরে বলেছে কিনা আমি জানিনা।
এ বিষয়ে যুদ্ধাপরাধ প্রতিরোধ আন্দোলন কমিটির সভাপতি রেজাউল হাবিব রেজা বলেন ঃ “মুক্তিযোদ্ধা-চুক্তিযোদ্ধা শব্দাবলী উচ্চারণে বীর মুক্তিযোদ্ধা এ.এস.এম. ফেরদৌস ও বীরমুক্তিযোদ্ধা গোপাল নন্দী যে দৃঢ়তায় বলেন তা সত্য হতে পারে। অভিযুক্তরা তার অস্বীকার করবেই। পিবিআই তা চেপে যেতে পারেন বাড়তি ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকতে।”
বিষয়টির সঠিক তদন্ত হওয়া উচিত। জায়গা নিয়ে পারিবারিক কলহ মেটানো অতীব প্রয়োজন।
Leave a Reply